ঢাকা,মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৪

প্রশ্নপত্র ফাঁস ঠেকানো না গেলে শিক্ষাব্যবস্থা ধ্বংস হয়ে যাবে “এ যেন মদন নগর, বাঘ-বিড়াল একই দর”

:: এম.আর মাহমুদ ::

প্রবীণ একজন সাংবাদিকের একটি মন্তব্য বার বার মনে পড়ে। তিনি বেঁচে নাই। তবে তার মন্তব্যটি ভুলতে পারি নাই। তিনি বলেছিলেন, বাজারে যদি গাভীর নির্ভেজাল দুধ পাওয়া যায়, তাহলে বাড়িতে গাভী পুষে লাভ কি? সে সময় বয়সের কারণে মন্তব্যটির মর্মার্থ অনুধাবন না করলেও এখন তিলে তিলে টের পাচ্ছি। চলমান এস.এস.সি ও সমমানের পরীক্ষা চলছে। কোমলমতি শিক্ষার্থীরা চমৎকার শৃঙ্খলার মধ্যে পরীক্ষা দিচ্ছে। শুধু শিক্ষার্থী নয় অভিভাবকেরাও সন্তুষ্ট। ডিজিটাল পদ্ধতির বধান্যতায় পরীক্ষার্থীরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পরীক্ষার আগেই প্রশ্নপত্র পেয়ে যাচ্ছে। এতে লাভবান হচ্ছে শহর কেন্দ্রিক শিক্ষার্থীরা। গ্রামের হতভাগা অধিকাংশ পরীক্ষার্থীর হাতে নাই উন্নতমানের এনড্রয়েট মোবাইল। ফলে হতদরিদ্র পরিবারের শিক্ষার্থীরা বৈষম্যের শিকার হচ্ছে। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সেই কবিতাটির দু’টি চরণ বার বার মনে পড়ে ‘খেলা রাম খেলে যায়, হতভাগা অসহায়, শুধু শুধু মার খায়।’ এসব বলে লাভ কি? ‘পুরা কুয়াইল্যার পইর, ভাদ মাসে পুয়ায়।’ (হতভাগা ব্যক্তির পুকুর ভাদ্র মাসে শুকায়) সারা দেশে প্রশ্নপত্র সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ছে। কিন্তু শুধু দরিদ্র পরিবারের শিক্ষার্থীরা ফাঁস হয়ে পড়া প্রশ্নপত্রের সুফল থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এভাবে পরীক্ষা পদ্ধতি অব্যাহত থাকলে মেধাবী শিক্ষার্থীদের কোন মূল্যই থাকবে না। সারা দেশে যেসব শিক্ষার্থীরা পরিশ্রম করে লেখাপড়া করেছে, তারা অবশ্যই পরীক্ষায় ভাল ফল করবে। আর যারা লেখাপড়া করেনি তারাও যদি প্রশ্নপত্র ফাঁসের বদৌলতে ফল ভাল করে তাহলে আর প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রয়োজনটা কি? শিক্ষামন্ত্রী মহোদয় ঘোষণা দিয়েছিলেন, প্রশ্নপত্র ফাঁসের প্রমাণ পাওয়া গেলে ওই পরীক্ষা বাতিল করা হবে। ইতিমধ্যে প্রশ্নপত্র ফাঁসকারীদের ধরতে ৫ লাখ টাকা পুরস্কারও ঘোষণা করেছে। কর্তৃপক্ষ ইচ্ছা করলে পরীক্ষা বাতিল করতে পারে। কিন্তু ক্ষতিগ্রস্থ হবে অসংখ্য নিরীহ শিক্ষার্থী। সে দায় নেবে কে? হয়ত সে কারণে মন্ত্রী মহোদয় নিজের ঘোষণা থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন! প্রশ্নপত্র ফাঁস প্রসঙ্গে প্রবীণ এক শিক্ষক দুঃখ করে বলতে শোনা গেছে, মাছের পঁচন শুরু হয় মাথা থেকে। শিক্ষার পঁচন শুরু হয়েছে প্রশ্নপত্র ফাঁস থেকে। শুধুমাত্র এস.এস.সি, এইচ.এস.সি পরীক্ষাই নয়, প্রাইমারী থেকে শুরু করে সব ধরণের নিয়োগ ও ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়ে যাচ্ছে। কারা এমন অপকর্মে জড়িত তাও সনাক্ত করা যাচ্ছে না। কালে ভাদ্রে দু’একজন চুনু পুঁটি ধরা পড়লেও রাঘব বোয়ালেরা অধরায় থেকে যাচ্ছে। ফলে প্রশ্নপত্র ফাঁসের নাটের গুরুরা রাতারাতি আঙ্গুলে ফুলে বটগাছ হয়ে যাচ্ছে। যাক! অনেক কথা না বলাই ভাল। সম্প্রতি সরকার ৫৭ ধারা থেকে কমিয়ে ৩২ ধারায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন চালু করতে যাচ্ছে। এ কালো আইনের ধারায় ২৫ বিয়োগ হলেও সাজার ওজন বেড়ে গেছে। চোরকে চোর বলা যাবে না। অপরাধীদের ছবিও তোলা যাবে না। যা করলে গুপ্তচর হিসাবে ৩২ ধারা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের আওতায় আসতে হবে। ফলে অপরাধীদের উল্লাস নৃত্য ঠেকানো যাবে বলে মনে হয় না। এক্ষেত্রে না বলে উপায় নেই। হাত-পা যার বাঁধা নীরবে তার মার খাওয়া ছাড়া কোন উপায় আছে কি?

বর্তমান সরকার শিক্ষাক্ষেত্রে অনেক অর্জন রয়েছে, যা অস্বীকার করার কোন সুযোগ নেই। তবে প্রশ্নপত্র ফাঁস অব্যাহত থাকায় শিক্ষা ক্ষেত্রে ব্যাপক অর্জনের অনেকাংশই ম্লান হতে চলছে। এক্ষেত্রে শিক্ষামন্ত্রীর ব্যর্থতার বিষয়টি খতিয়ে দেখা দরকার বলে বিজ্ঞজনদের অভিমত। বেরসিক এক ব্যক্তি মদন নগরের একটি গল্প বলতে শোনা গেছে। তিনি বলেছেন, দেশ যেন মদন নগর, যেখানে বাঘ আর বিড়াল একই দর। চোর চুরি করতে গিয়ে মালিক জেগে গেলে মালিকের ফাঁসি হবে। অতএব, মন্তব্য নি®প্রয়োজন।

এম.আর. মাহমুদ, চকরিয়া।

পাঠকের মতামত: